অজ্ঞাত হ্যাকারের দল গত শুক্রবার করেছে নজিরবিহীন হামলা

বিশ্বজুড়ে সাইবার-নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা হ্যাকিং আক্রান্ত কম্পিউটার যোগাযোগব্যবস্থা সচল করতে গতকাল শনিবার থেকে উঠেপড়ে লেগেছেন। এই বিশাল সাইবার হামলায় জড়িত অপরাধীদের চিহ্নিত করার চেষ্টাও চালাচ্ছেন তাঁরা। রাশিয়ার ব্যাংক থেকে শুরু করে ব্রিটিশ চিকিৎসাব্যবস্থা হয়ে ফ্রান্সের মোটরগাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান—সবাই এ হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত। কম্পিউটার যোগাযোগব্যবস্থা অচল থাকায় বিশ্বের বহু দেশের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম থমকে আছে। প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের কম্পিউটারে সংরক্ষিত জরুরি তথ্যভান্ডার বা ফাইলে ঢুকতে পারছে না। হ্যাকাররা এসব তথ্য একেবারে নিশ্চিহ্ন করার ভয় দেখিয়ে অর্থ দাবি করছেন। ‘মুক্তিপণের’ দাবিতে কম্পিউটার যোগাযোগের দুনিয়ায় এ রকম হামলা সম্ভবত এটিই বৃহত্তম। অজ্ঞাত হ্যাকারের দল গত শুক্রবার এ নজিরবিহীন হামলা করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, তারা এতে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসএর কাছ থেকে চুরি যাওয়া তথ্য-সরঞ্জাম ব্যবহার করেছে। ইউরোপের পুলিশ সংস্থা ইউরোপোল বলেছে, চলমান এ সাইবার হামলা নজিরবিহীন মাত্রার এবং অপরাধীদের ধরতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিশদ তদন্ত দরকার। ফিনল্যান্ডের হেলসিংকিভিত্তিক সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান এফ-সিকিউরের প্রধান গবেষণা কর্মকর্তা মিকো হাইপোনেন বলেন, এটা ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সাইবার হামলা। শতাধিক দেশের ১ লাখ ৩০ হাজার যোগাযোগব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটেছে। হাইপোনেন বলেন, রাশিয়া ও ভারতে হামলার মাত্রা তুলনামূলকভাবে বেশি। কারণ এই দুই দেশে পুরোনো উইন্ডোজ এক্সপি অপারেটিং সফটওয়্যারনির্ভর কম্পিউটারের ব্যবহার বেশি। ফরাসি মোটরগাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রেনো ফ্রান্স এবং স্লোভেনিয়ায় নিজেদের কারখানায় উৎপাদন বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে। ভাইরাসের বিস্তার রুখতেই তারা এমন পদক্ষেপ নেয় বলে জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কুরিয়ার প্রতিষ্ঠান ফেডেক্সও স্বীকার করেছে, অর্থ চেয়ে তাদের ওপর সাইবার হামলা হয়েছে। রাশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, তাদের হাজারখানেক কম্পিউটারে ‘ভাইরাস হামলা’ হয়েছে। সেগুলো ধ্বংস করার প্রক্রিয়া চলছে। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং রেলওয়ে বিভাগও আক্রান্ত। স্পেন, পর্তুগাল, জার্মানি, ইতালি, নরওয়ে প্রভৃতি দেশেও সাইবার হামলার খবর মিলেছে। চীনে এ ধরনের হামলার কোনো সরকারি ঘোষণা না এলেও সামাজিক যোগাযোগের অনলাইন মাধ্যমে এর খবর পাওয়া গেছে। সাইবার-নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান অ্যাভাস্ট বলেছে, হ্যাকাররা বিভিন্ন স্থানে ‘মুক্তিপণ চাইছে’। এ রকম ৭৫ হাজার ঘটনার খবর মিলেছে। যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যসেবাদাতা এনএইচএস বলেছে, তাদের কাছে ওয়ানাক্রাই নামের একটি ‘র্যানসমওয়্যার প্রোগ্রাম’ ৩০০ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ দাবি করেছে। এই অর্থ ভার্চ্যুয়াল মুদ্রায় (বিটকয়েন) পরিশোধ করলে প্রতিটি কম্পিউটারের আক্রান্ত ফাইলগুলো মুক্ত করে দেওয়া হবে বলে হ্যাকাররা অঙ্গীকার করেছেন। সবচেয়ে বড় সাইবার হামলাটি হয়েছে এনএইচএসের ওপরই। এই জাতীয় প্রতিষ্ঠানের অধীন প্রায় ৪০টি সংস্থার কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটেছে। বহু ক্ষেত্রে পূর্বনির্ধারিত অস্ত্রোপচার এবং রোগীর সঙ্গে চিকিৎসকের সাক্ষাৎ বাতিল করতে হয়েছে।
Previous
Next Post »